বিড়ালগাথা
ধরো তোমার পোষা খুব ফুটফুটে বিড়ালের বাচ্চাটাকে শয়তান টাইপ কেউ একটা স্টিলের বাক্সে আটকে রেখেছে। পুরো বাক্সকে কিভাবে জানি অক্সিজেনমুক্ত করেও রেখেছে। এরপর তাতে পটাশিয়াম সায়ানাইড এর বোতল, একটা হাতুড়ি, একটা গাইগার-মুলার কাউন্টার আর কিছু রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থ রেখে দিয়েছে। যখনি রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থে ভাঙন মানে তেজস্ক্রিয়তা শুরু হবে, তখন গাইগার কাউন্টার তা শনাক্ত করবে এবং হাতুড়িকে সক্রিয় করে তুলবে আর সেই সাথে হাতুড়ি ভেঙে ফেলবে সায়ানাইডের বোতল। আর বিড়ালবাচ্চাও মারা পড়বে। এখানে কথা আছে। আমরা কেউই সঠিক করে বলতে পারি না রেডিওঅ্যাক্টিভ সাবস্ট্যান্স ঠিক কখন ভাঙা শুরু করবে মানে তেজস্ক্রিয়তা শুরু হবে। এটা ভাঙা শুরু না হলে ওই কাউন্টার সক্রিয় হবে না, হাতুড়িও সক্রিয় হবে না আর বিষের বোতলও ভাঙবে না আর বিড়ালও মরবে না।
কারণ পদার্থবিজ্ঞানীরা মনে করেন পরমাণু সুপার পজিশনে থাকে, যেখানে বলা হয় একই সময়ে পরমাণু ভাঙতে পারে আবার নাও ভাঙতে পারে! ঠিক কেউ যখন বাক্সের ঢাকনা খুলে দেখবে (Observe করবে), তখনি বলতে পারবে বিড়ালটা মারা গেছে না বাঁচার জন্যে ম্যাও ম্যাও করছে! তার মানে যতক্ষণ না পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ততক্ষণ বিড়ালটা একই সাথে জীবিত ও মৃত!
এটা হলো অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আরউইন শ্রোডিঞ্জারের (Erwin Schrödinger) চিন্তা-পরীক্ষা (Thought Experiment)। এটা বিখ্যাত Cat Paradox নামেও। ওয়েভ ফাংশন ব্যাখ্যা করতে তিনি এই পরীক্ষা করেন। ওয়েভ ফাংশন সাবঅ্যাটমিক পার্টিকেল, যেমন ইলেক্ট্রন-প্রোটনের শক্তি, অবস্থান কিংবা ভরবেগের সব রকম সম্ভাবনা বর্ণনা করে, ঠিক যেমন বিড়ালের বাঁচা-মরার দুইটা সম্ভাবনাই রয়েছে। যখনি তুমি দেখবে ঢাকনা খুলে, তখন যেটা হবে তা হলো ওয়েভ ফাংশন কলাপস করবে। বাচা-মরা দুইরকম চিন্তা করেছ, এখন সেটা কলাপস করে যেকোনো একটা নিশ্চিত ধারণা পাওয়া গেছে। নিউটনের খালি চোখে দেখা পৃথিবীর প্রিন্সিপালগুলো (ক্লাসিকাল মেকানিক্স) এসব পার্টিকেলের আচরণ ব্যাখ্যায় যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সে ওয়েভ ফাংশনের মতো বিষয়গুলো এসেছে।
Millikin University র পদার্থ ও জ্যোতির্বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক Eric Martell ব্যাপারটা সহজ করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, তুমি যদি একটা ইলেকট্রনকে একটা নিউক্লিয়াসের আশেপাশে কোথাও রাখো, এটা যেকোনো অবস্থানেই থাকতে পারে, যতক্ষণ না তুমি তা অবজারভ করছ! ফিজিকাল সিস্টেম বা ভৌত প্রক্রিয়াগুলোতে আসলে অবজারভ না করা পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলা যাবে, এমনকি যদি কোনো একটা সম্ভাবনা খুব কম হয়েও থাকে! ছোট ছোট কণার জগৎ কি বিচিত্র, কি অদ্ভুত!
তথ্যসূত্র
Comments
Post a Comment